উপন্যাস: সুপ্রিয়া প্রিয়তমা পর্ব দশ - ঘরে ফেরা
পড়ুন উপন্যাস: সুপ্রিয়া প্রিয়তমা পর্ব দশ - ঘরে ফেরা (ছবিটির নিচে)
নিবেদন:
উপন্যাসটির
প্রেক্ষাপট
আশির
দশকের প্রথম ভাগ।
তখন মোবাইল ফোন
আসেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে
টেলিফোনও ছিল না। তখন চিঠির মাধ্যমে
প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ
করতো সবাই। আর
গ্রাম-গঞ্জে ও
পাহাড়ি অঞ্চলে বৈদ্যুতিক
বাতিও ছিল না। এরকম সময়-পরিবেশে
যাপিত জীবনের কল্পকাহিনি
নিয়ে গড়া এ উপন্যাসটি। আশির
দশকের সময়-পরিবেশ অনুধাবন
করে উপন্যাসটির সকল
পর্ব পড়তে থাকলে
নিঃসন্দেহে আপনার ভালো
লাগবে। এটি দশম পর্ব। প্রথম পর্ব হতে পড়ার অনুরোধ রইলো। প্রথম পর্বের লিংকটি এখানে দিয়ে দেয়া হলো
উপন্যাস:
সুপ্রিয়া প্রিয়তমা
পর্ব
দশ - ঘরে ফেরা
নিদ্রা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে লঞ্চের ক্যাবিন থেকে যখন বাইরে এলাম, তখন ভোর সাড়ে সাতটা
বেজে গেছে। মাদার-সুপারির মাথার উপর দিয়ে সূর্যটা উঁকি দিতে দিতে
ধীরে ধীরে আকাশের চূড়ার
দিকে উঠছে। হেমন্তের সকাল। শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় প্রভাতী সূর্যের মুক্তা-মুকুট। শীত-ভেজা নদী তীরের কার্তিক শাইল
ধানের সোনা মাখা হাসি। হেমন্তের ভোর। লম্বা একটি হুইসেল বাজিয়ে ময়ূর পঙ্খী লঞ্চখানা তেতুলিয়ার পূর্ব পাড়ের একটি ঘাট ধরলো। খালাসি ও যাত্রীদের চিল্লাচিল্লিতে লঞ্চঘাট মুখরিত হয়ে উঠলো। বহুদিন পর আবারো নিজ জেলার মানুষের কোলাহল-মুখর চিল্লাচিল্লি
শুনতে পেলাম আমি। সিলেট থেকে ঢাকা, এবং পরে ঢাকা হতে দক্ষিণের দ্বীপগামী একটি
লঞ্চে করে আমি বাড়ির পথে।
লঞ্চের সিঁড়ি বেয়ে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীরা নেমে যাচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী লঞ্চে ওঠার জন্য সিঁড়ির গোড়ায় এসে ভিড় জমিয়েছে। যাত্রীরা লঞ্চে উঠে আসলে হুইসেল বাজিয়ে দক্ষিণের উদ্দেশ্যে লঞ্চখানা আবার ছেড়ে দিলো।
কল কল শব্দ করে দুদিকে পানি কেটে লঞ্চখানা নদীর তীর ঘেঁষে আরো দক্ষিণে
এগিয়ে চললো। ভাটির গাং। অনুকূলে বাতাস। মাঝিরা পাল তুলে নৌকোর মাচায় জড়ো হয়ে গান ধরেছে। জেগে ওঠা নবীন চরে গাংচিল-বালিহাসদের মেলা বসেছে।
দুটি চরের মাঝখান দিয়ে লঞ্চ খানা এক টানা শব্দ করতে করতে এগিয়ে চললো। নবীন চর। পানি-ঘেষা কচিঘাসের জড়াজড়ি। সবুজ লিকলিকে
লম্বা-লম্বা ঘাস। এক পাল মহিষ মুখ ডুবিয়ে আধা-ডোবা কচি কচি ঘাস
খাচ্ছে। আরো কতটুকু এগিয়ে গিয়ে লঞ্চখানা নারকেল সুপারি বাগানের পাশ ঘেঁষে চললো। দিগন্ত বিস্তৃত বাগান। সারি সারি সুপারি গাছ। মোটা পাখালো-মাথার নিচে হলুদ-রঙ্গা সুপারির কাঁদি। বাগানের চতুর সীমানায় লম্বা লম্বা নারিকেল গাছ। মাথার কাছাকাছি সবুজ নারকেলের ঠাসাঠাসি।
আমাদের বাড়ির চতুর সীমানায়ও সারি সারি নারকেল গাছ। সোনালী সবুজ নারকেলরা ঠাসাঠাসি হয়ে গাছের গলায় প্রতিবছর মালা গাঁথে। শেফালী নারকেল ও গুড় দিয়ে ভাত খেতে দারুন পছন্দ করে। শেফালির কথা মনে হতেই
মনের ভিতরে আনচান করে বিরহ বেদনারা মোচড় দিয়ে উঠলো। আর মাত্র ঘন্টা খানেক
বাকি ! বহু মাস পর দীর্ঘ বিরহের অবসান হবে ! শেফালির মুখখানা আমার চোখের সামনে ভেসে আসতেই আনন্দের আতিশয্যে আমার
চোখ
দুটি বুজে আসে। শেফালির প্রতিচ্ছবি আমার মনের দৃশ্যপটে জড়ো হয়ে মধুর হয়ে ধরা দেয়।
কিছুক্ষন পরই আমি শেফালিকে দেখতে পাবো ! আমার কল্পলোকে প্রবলভাবে আমি শেফালিকে অনুভব
করতে থাকি। এক ঘন্টার দীর্ঘ সময় কাটাতে আমি শেফালিকে নিয়ে কল্পনার শত সহস্র ফানুস উড়িয়ে
চলি …..
লঞ্চের
ক্যাবিনে বসেই আমি শেফালিকে কল্পনা করতে থাকলাম। কল্পলোকের রথে চড়েই আমি আমাদের বাড়ির
আঙিনায় পৌঁছে গেলাম। আমাকে দেখেই শেফালী চমকে ওঠে! খালি পায়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখ তুলে অপলক তাকিয়ে থাকে…
.....কেমন আছো, প্রিয়তমা....
শেফালী কিছু একটা বলতে ঠোট খোলে।
বলতে চেয়েও বলতে পারেনা। শেফালির
ঠোঁট দুটো আবার বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ওর চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে ওঠে। দর দর করে বিগলিত অশ্রুধারা গাল বেয়ে মাটিতে পড়ে। আমি শেফালীকে বুকে টেনে নেই। আমার
বুকে মুখ রেখে শেফালী প্রবল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমি শেফালির পিঠে হাত বুলাই...
দূরে রেখে রেখে আর তোমাকে কষ্ট দেবো না লক্ষীটি
!
আমি চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। আজ থেকে তোমার পলাশ সব সময়ের জন্য তোমার পাশেই থাকবে…
শেফালী আমার
বুক
থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। আমার মুখের উপর চোখ রাখে। ধরা গলায় বলে...
আমাকে সান্তনা দিচ্ছ বুঝি? কি দরকার এই মিথ্যা সান্তনার! দূরে থাকতে থাকতে আমার তো প্রায় সয়েই
গেছে। পলাশ, তুমি আমার স্বামী। তোমার ইচ্ছে
পূরণের প্রচেষ্টাইতো তো আমার সাধনা। তোমাকেতো অখুশি করতে পারি না আমি ! চাকরী করার ইচ্ছে যদি তোমার থাকবে, আমার তো আর অসম্মতি থাকার কথা নয়…..
আমি শেফালির চোখের অশ্রু মুছে দেই। দুই হাত দিয়ে মুখখানা উঁচু করে ধরি। বলি,
….
মিথ্যে নয় গো সত্যি।
সত্যি, সত্যি
।
একেবারে সব কিছু নিয়েই চলে এসেছি। লঞ্চঘাট থেকে যখন সব মালামাল বাড়িতে এসে পৌঁছুবে, তখন নিশ্চই তোমার বিশ্বাস হবে….
শেফালী ব্যাপারটাকে সত্যি বলে ভাবতে পারে না। চোখদুটোকে করূন করে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। আমি শেফালির বিশ্বাস আনার জন্য শেফালীকে আরো কাছে টেনে নেই....
শেফালী, সত্যিই আমি চাকরি ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি।
ওখানে ছোট্ট বাক্সটা খুললে আমার রিলিজ অর্ডারটি দেখতে পাবে। চার বছরের চাকুরে জীবনের নিঃসঙ্গতা আমাকে নির্জীব করে দিয়েছে শেফালী। নির্জীব-অস্তিত্বকে কাটিয়ে উঠে সজীব হবার জন্য আমি মিথ্যে কুহুকিনির সঙ্গ চেয়েছিলাম। আমার পরিবেশ, সহকর্মী এবং ক্লান্তিহীন কর্মের মধ্যে ডুবে থেকে আমি আমার নিঃসঙ্গতার ক্লান্তিকে চাপা দিতে চেয়েছিলাম। মোহাবিষ্ট
তমাশার ধোঁয়াশার মধ্যে জীবনটাকে টেনে হেঁচড়ে বয়ে আনতে আনতে আমি দেখতে পেলাম, - তোমার-আমার ভালোবাসা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। আমার সহ্য হলো না শেফালী। ছুটে তোমার কাছে চলে এলাম। তুমি যে আমার জ্যোৎস্না রাত্রের শিউলি
!
শিউলির গন্ধ উপেক্ষা করে পলাশ বুঝি দূরে থাকতে পারে
!
শেফালির চোখ দুটো আশ্চর্যের জোয়ারে ভরে যায়
!
শেফালি আমার দিকে চেপে আসে। ধীরে ধীরে বলে.....
তোমাকে আমি অবিশ্বাস করি না গো ! আমি বড় স্বার্থপর
! নিজের সাহসহীনতার জন্য তোমার সাথে পাহাড়ি অঞ্চলে যেতে রাজি হইনি। যদি রাজি হতাম, তাহলে কি তোমার চাকরি ছাড়তে হতো? আমাকে তুমি
ক্ষমা করো !
না না শেফালী, আমি আমার নিজের স্বার্থের জন্যই চলে এসেছি। দূরে থাকতে থাকতে তোমার অভাবে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। জীবনের পরতে পরতে শ্যাওলা জমে গিয়েছিল। বিরহে বিরহে জীবনের রূপ-রস-গন্ধ সব শুকিয়ে গিয়েছিল। আমি তোমাকে সুখী করতে আসিনি শেফালী
! নিজেকে বাঁচানোর জন্য তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমার শ্যাওলা-জমা মনে নবজাগরণের স্রোত বইয়ে দেবে। আমার হৃদয়-মরুর শুষ্ক বালুকাময় মরুপ্রান্তরে
ভালোবাসার রূপ-রস দিয়ে গন্ধ ছড়াবে। পারবে না শেফালী?...
শেফালী দুহাত দিয়ে আরো জোরে আমাকে চেপে ধরে। ভাব-বিহবল স্বরে তার কন্ঠ জড়িয়ে আসে....
পলাশ
!
এই অভাগিনীর জীবন তাহলে পূর্ণ হবে। আজকে তোমার কথাগুলোকে আমার স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে ! এ যে আমার আশা-আকাঙ্ক্ষারও উপরি-পাওনা। এত সুখ কি সইবে
আমার পলাশ? এত সুখ কি আমার সইবে?
শেফালী ! আমিও তো তাই ভাবছি। চাকরির মোহগ্রস্ত মানুষ আমি। চাকুরীর নেশায় এতদিন অন্ধ ছিলাম। ভাবতাম, এত লেখাপড়া করেছি, চাকরি না করলে যে সব কিছু অসার হয়ে যাবে। তোমাকে হারাতে হারাতে চাকুরীর নেশা যখন ভাঙলো, তখন আমার মনের চোখ দুটো খুলে গেলো। সে চোখ দিয়ে আমি আমার লেখাপড়া-অর্জিত জ্ঞান ও জ্ঞানের ক্ষেত্র দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, আমার কার্যক্ষেত্র চাকুরী স্থল নয়। নির্জন পাহাড়ি ভূমির দিকে তাকিয়ে বহুদূর থেকে আমার সমতল জন্মস্থান আমাকে ডাকছে,
শুধুই ডাকছে, আমার কাছে এসো বাছা… আমাতে ফসল ফলাও …দেশের মানুষকে বাঁচাও… আমি তোমাকে সুখ দেবো.. শান্তি দেবো… নিঃসঙ্গতা ও বিরহ বেদনা থেকে মুক্তি দেবো… এসো বাছা !
আমি আমার জন্মভূমিকে স্মরণ করলাম, বিশাল দ্বীপ… বুক ভরা সবুজ ধানের ক্ষেত… দিগন্ত জুড়ে শ্যামল কাজল সুপারি-নারিকেল বাগান… সেখানে
পাখিরা গান গায়… বাতাস নাচে… গাভীরা হাম্বা রবে ডাকে… দুকুল ভাসিয়ে রুপালি নদী কল কল করে বয়ে চলে..
কি বলছো এ-সব পলাশ!
হ্যাঁ শেফালী, যা বলছি - হৃদয়ের নিংড়ানো অনুভূতি থেকেই তোমাকে বলছি
আমি । চাকুরীস্থলকে আমার কর্মস্থল ভেবে এতদিন আমি অন্ধ ছিলাম। আমার অন্ধত্ব দিয়ে তোমার আমার মিলন-সেতুকে আমি দেখতে পাইনি। অন্ধকারের আবর্তে পাক খেতে খেতে যখন চরম ধ্বংসের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছুলাম, তখন আমি তোমাকে দেখতে পেলাম। আমার অন্ধত্ব ঘুঁচে গেলো। আমি দেখলাম, তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী আমরা একটি ফার্ম গড়েছি… অতি বড় আধুনিক সেই ফার্ম… সে ফার্মে ফসল ফলছে… শাকসবজি হচ্ছে… ফলফলারি হচ্ছে… হাঁস-মুরগি গবাদিপশুও হচ্ছে… আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে উন্নতির ঢল নামছে… সারি সারি ধানের ক্ষেত… শ্যামলা সবুজ শাকসবজি ও ফুল-ফলের বাগান… সুন্দর লাল টুকটুকে বাছুরের হাম্বা রব…. স্বচ্ছ পানিতে ভাসমান
বর্ণালী ফুল…. বাতাস নেচে বেড়াচ্ছে সবুজ ধানের পাতায় পাতায়… আমি হাঁটছি ধান ক্ষেতের আল বেয়ে বেয়ে… দূরে
পেছন থেকে দৌড়ে দৌড়ে তুমি ডাকছো আমাকে, পলাশ! দাঁড়াও! একটু দাঁড়াও! আমিও আসছি! আমিও আসছি.....
আনন্দে শেফালির চোখ দুটো বাষ্পীভূত হয়ে ওঠে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে
সে।
আমি দুহাত দিয়ে শেফালির মুখখানাকে আমার মুখের সামনে তুলে ধরি। মুখে মুখ লাগিয়ে চুমুক দেই….
লঞ্চের
আর একটি হুইসেলের শব্দে আমার ভাবনায় চ্ছেদ ঘটলো। লম্বা হুইসেল বাজিয়ে লঞ্চ খানা আর একটি ঘাট ধরলো। গঙ্গাপুর। অভিশপ্ত গঙ্গাপুর। তেতুলিয়া গঙ্গাপুর ভাঙছে। দুড়ুম
ধাড়ুম শব্দ করে এখনো নদীপাড়ের চাঙ্গারি পড়ছে। নদীতীরে ধ্বসে-পড়া তাল-নারকেল গাছের ন্যাংটো
শিকড় ধুয়ে মুছে উলঙ্গ হয়ে মৃত মানুষের কঙ্কালের খুলীর মতো কদাকার হাসছে। জমি-ভাঙ্গা মানুষগুলো চিন্তা-ক্লিষ্ট চেহারা নিয়ে উদোম ভিটের
কোনায় দাঁড়িয়ে ঢাকা থেকে আগত লঞ্চ দেখছে।
তাল নারিকেলের মাথা ছাড়িয়ে সকালের সূর্য অনেক উপরে উঠে এসেছে। পুরো নদীতীরে
হৈমন্তী বাতাসের উল্লাস। ধানের ডগায় নাচন ধরেছে
যেনো। অদূরে বেড়ি বাঁধ। উঁচু প্রশস্ত। জলোচ্ছ্বাসের কবল হতে ফসলকে বাঁচাতে
এই
বেড়ি বাঁধ।
দ্বীপবাসী মানুষের জীবন নিঃসীম-অনিশ্চিতে
ঘেরা। সর্বনাশা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, আর জলোচ্ছ্বাস এদের নিত্য সঙ্গী। উনিশশো সত্তর সালের বারোই নভেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি প্রলয়ংকর দিন। রাতে জলোচ্ছাসের তোরে আমাদেরকে দোতলার পাটাতনে উঠে জীবন বাঁচাতে হলো। উঠোনের উপর দিয়ে নৌকা চললো। দক্ষিণের উপকূল হতে ভেলার মতো ভাসতে ভাসতে আসতে থাকলো অসংখ্য মৃত মানুষের লাশ
!
খবর এলো, ভোলা-সন্দীপ-হাতিয়ার উপকূলবর্তী মানুষরা কেউ বেঁচে নেই। সর্বনাশা জলোচ্ছাস ওদের
ঘর-বাড়ি ভিটে-মাটি জান-মাল সবকিছুকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সংসারের বাতি দেবার মতো আর কেউ বেঁচে নেই ! বাড়ির ভিটেটুকু
কোথায় ছিল,তারও কোনো হদিশ নেই। চার পাঁচ দিন পর যখন সাগরের পানি সাগরে ফিরে গেলো, রাস্তার উপরে পড়ে থাকলো এক স্তর মোটা লবণের সাদা সাদা গুঁড়ো। ফসলের মাঠ থেকে আসতে থাকলো পঁচা লাশের গন্ধ। উদোম বাড়িঘর থেকে আসতে থাকলো স্বজন হারা মানুষের করূন-কান্নার
শব্দ। সারা অঞ্চল জুড়ে অভাব আর অভাব ! খাবারের অভাব। পান করার পানির অভাব
!
এমনকি আগুন জ্বালানোর দিয়াশলাইয়ের অভাব ! ভেসে আসা নারিকেলের পানি ও নারকেলই দ্বীপের মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখলো
বিদেশি রিলিফ আসার আগ পর্যন্ত।
সে রকমের আরেকটি ঝড় আমার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেলো
!
সে ঝড়ের ধ্বকল সারাতে আমি আমার শ্যামল গাঁয়ে পালিয়ে এসেছি - আমার জন্মস্থানের শ্যামল ছায়ার
মায়ার বলয়ে। তাল-নারকেল-সুপারি ধানের কাজল মায়ায়। এ মায়া আমার
আত্মার সাথে প্রোথিত হয়ে আছে যেনো। ভেজা মাটির সোধা
গন্ধের মতো ! মিলি নামের রাক্ষসীরা এখানে নেই। এখানে আছে প্রান্তর জুড়ে সবুজ ধানের ক্ষেত.. নদীতীরের
নারকেল সুপারির বাগান… রুপালি নদী…আর শেফালী নামের আমার
‘প্রিয়তমার‘ মধুর আলিঙ্গন !
সে আলিঙ্গনের আবেষ্টন পেতে আমার বিরহী-মন আমাদের শ্যামল গাঁয়ের দিকে দুরন্ত বেগে উড়ে উড়ে চললো….
কোন মন্তব্য নেই
50