ছোট গল্প: ভালোবাসার সরলায়ন
ভালোবাসার সরলায়ন
এক
পরগা নামের মেয়েটিকে আমি প্রথম আমার বাসাতেই দেখেছিলাম। মাঝারি উচ্চতার সুস্বাস্থ্যের পরগার মুখে একটা হাসি লেগেই থাকতো। টানা টানা দুটো চোখে দুষ্টুমি ভরা ভালো লাগার অনুভূতি। প্রথম দেখাতেই আমার মনে একটা পরিচিত শিহরণের জোয়ার তুলেছিলো। ভিসিআর এ ছবি দেখার জন্য আর সবার সাথে সেও এসেছিলো আমার বাসায়।
বসেছিলো আমার পাশেই। অপরিচিতা পরগার দেহের উত্তাপ আমার স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের চারদিকে একটা পাতলা অথচ স্পষ্ট জড়তার আবরণের সৃষ্টি করেছিলো। মনের জড়তা
ভাঙার জন্য আমি পরগার দিকে ফিরে তাকাই….
এক্সকিউজ মি! আপনি আমার বাসাতে ভিসিআর দেখতে আসাতে আমি খুব সন্তুষ্ট হয়েছি।
হ্যাঁ, সেঁধে সেঁধেই তো এলাম। ডিস্টার্বেন্স ফিল করছেন না তো আবার?
ছি, কি যে বলেন! আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি এবং আজকের ছবিটা নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে আরো ভালো হয়ে উঠবে। আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও। তবে আমার উপস্থিতি এতোই যদি পছন্দ করেন, তাহলে রেগুলারই কিন্তু জ্বালাতন করবো।
অবশ্যই। অবশ্যই। তবে আপনার সাথে কিন্তু আমার পরিচয়টা হয়নি এখনো?
ও স্যরি, মাসুদ সাহেবের স্ত্রী আমার বড় বোন
মানে আপনি মাসুদ ভাইয়ের শালী
আমি কিন্তু এ শব্দটা উচ্চারণ করতে চাইনি। শব্দটা আমার কাছে গালি গালি লাগে
তবুও তো সত্যি কথা। তবে আমার সাথে আপনার সম্পর্কটা কিন্তু খুবই মধুর
কেমন?
মানে বেয়াই বেয়াইন
পরগা মিষ্টি হাসে। তার হাসিতে আমার ড্রয়িংরুমটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমার স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের চতুর্দিকে গড়ে ওঠা সংকোচের আবরণ উধাও হয়ে যায়। সমস্ত পরিবেশ সুন্দর হয়ে ওঠে। ভিসিআর এর ছবি আরম্ভ হয়ে যায়। আমরা সবাই মিলে উপভোগ করতে থাকি।
দুই
অনেকদিন হয়ে গেল আমার স্ত্রী কন্যা দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেছে। সারাদিনের অফিস খাটুনির পর বাসায় এসে নিঃসঙ্গ পরিবেশে হাপিয়ে উঠি। ইদানিং এ বিল্ডিং এ পরগার আগমন আমার এ হাঁপিয়ে উঠাকে কিছুটা কমিয়ে এনেছে। মাসুদ সাহেব আমাদের অফিসেরই একজন অফিসার।
দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামলে গ্রাউন্ড ফ্লোর এর প্রথম বাসাটা মাসুদ সাহেবের। লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে পরগা তারই বাসাতে উঠেছে। পরগার সাথে আমার অনেক কথাই হয়। এ কথায় সে কথায় আমি পরগাকে জানি। পরগাও আমাকে জানে। একদিন দুষ্টুমির ছলে পরগাকে জিজ্ঞেস করি, ….
আচ্ছা, আপনার এমন বিদঘুটে নাম হল কেন?
অবাঞ্চিতা বলে
মানে?
মানে, পাঁচ কন্যা সন্তানের পর বাবা-মার আশা ছিলো যে তাদের ষষ্ঠ সন্তান পুত্র সন্তান হিসেবে পৃথিবীর আলো দেখবে। বিধাতার ইচ্ছে, আমি মেয়ে হয়ে জম্মালাম। তাই পরগাছা। ক্রমে ক্রমে সে পরগাছাটাই সংশোধিত, সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত হয়ে পরগা হয়ে গেছে।
ছি, কি যে বলেন! বাবা-মা বুঝি তাদের সন্তানকে পরগাছা ভাবেন?
না, ভাবার কথাও নয়। তবে আমাদের সমাজের একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে ছয় ছয়টা মেয়ে যারা পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনে কোন ভূমিকা রাখতে
পারবে না।
কেন নয়? মেয়েরা কি আজকাল চাকরি-বাকরি করছে না?
অবশ্যই করছে। তবে তাতে বাবা-মার’ই
বা
লাভ কি? বিয়ের পরে মেয়ের নিজেরও তো তখন নতুন সংসার হয়ে যায়। তাই উপার্জনক্ষম পুত্র সন্তানরাই তো কাম্য। আমাদের বাবা-মার তো কোন দোষ নেই। তাছাড়া সাহেব, ছয়টা মেয়েকে জামাইর বাড়িতে পার করতে যে কেমন বেগ পেতে হয়, তার তো কোন খোঁজখবর রাখেন না!
কেন? আপনি কি নির্বিঘ্নে পার হতে ভরসা পান না?
না। তা আর কিভাবে পাই? কে’ই বা নেবে আমাকে?
আপনার মতো শিক্ষিতা রূপসী মেয়ের বরের বুঝি অভাব হবে? এরই মধ্যে তো গন্ডায় গন্ডায় লাইনে থাকার কথা!
আরে সাহেব!
একটাও নেই। তাইতো আপনার উপর আমার রাগ হয়, আপনি কেন এতো অল্প বয়সে বিয়ে করতে গেলেন! আপনার গলায় ঝুলে পড়তে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম!
কথাগুলো বলেই পরগা অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ে। পরগার পাতলা ঠোঁটের মধ্যবর্তী স্থানে মসৃণ দাঁতের উজ্জ্বল দ্যুতিতে আমি পুলকিত হতে থাকি। এক সময়ে পরগার হাসি থামে। নিজেকে শান্ত করে পরগা আবার বলে,
…..
আমাকে আপনার পছন্দ হতো?
কেন নয়? আপনার মতো মেয়েকে পেলে সব সময় মাথায় করে রাখতাম!
ধুত্তরি সাহেব, আপনার মাথায় আমি কখনো উঠতাম না। মাথায় উঠে লাভ কি? থাকতাম সব সময়.....
কোথায়?
আপনার ওই সুন্দর লোমশ বুকে
কথাগুলো বলেই পরগা আবার অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ে। তবে এবারের হাসি আগের মতো ঝন ঝন করে উঠলো না। একটা লজ্জাটে আবীরতা হাসিকে জরায়ে দিচ্ছিল শুধু। আমি তার লজ্জা-রক্তিম হাসিকে উপভোগ করতে থাকলাম। আমার চোখের প্রখর দৃষ্টিতে আরো লজ্জা পেল পরগা,……
কেমন করে তাকিয়ে আছে মানুষটা! একটুও তো লজ্জা শরম নেই!
কথা দুটো বলে আচমকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো পরগা। এবং আমার নাকের ডগায় আঙ্গুলের একটু টোকা দিয়ে কাচভাঙ্গা হাসি ছড়িয়ে দৌড়ে পালালো পরগা।
তিন
পরগার সাথে দিনের একটা নির্দিষ্ট দিনে আমার কথা হয়। ওর সাথে কথা বলার সময় একটা ব্যাপার আমার গোচরীভূত
হয়
যে, আমরা উভয়ে উভয়ের সাথে কথাবার্তার সময় প্রচন্ড উত্তাপ খুঁজে পাই। ইদানিং পরগা আগের মতো আমার সাথে কথা বলার সময় সহজ হতে পারে না। একটা বাষ্পালু কাঁপন তার কন্ঠের চতুর্দিকে জড়িয়ে পড়ে যেনো। দিনের নির্দিষ্ট সময়টির পূর্ব মুহূর্তে আমি পরগার জন্য প্রবল ভাবে অপেক্ষা করতে থাকি। মাংসল হাত দুটি দিয়ে আমার বুকের লোমগুলোকে আদর ছড়াতে থাকি। বিয়ে তো আমার অল্প বয়সেই হয়েছে। আর, তাছাড়া আমার চেহারার এমনই একটি প্রশংসা শুনেছি যে তাতে একটা বিবাহিত লোকের প্রচ্ছায়া সম্পূর্ণভাবে আমার শরীরে
অনুপস্থিত। তাই পরগার মতো মেয়ে যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাবে, তাতেই বা আশ্চর্য হবার কি আছে! পরগা বাস্তবিকই একটি সুন্দরী মেয়ে। তার কথাবার্তা হাসি তামাশা, এমনকি তার উত্তাল যৌবন তরঙ্গ আমার মনে উথাল পাথাল ঢেউয়ের জন্ম দেয়। আমার সামনে বসে পরগা যখন উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলে, তখন এ পৃথিবীটা সত্যি আমার সামনে বড় সুন্দর হয়ে ওঠে। বিমোহিত আমি সুন্দরের পবনে দোল খেতে খেতে পরগার সৌন্দর্য সুধা পান করতে থাকি।
চার
ইদানিং
পরগার একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করলাম, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে যখন আমি নিচে নামি, তখনই পরগা দরজা ঠেলে মিষ্টি হাসে। আমিও হেসে পরগার হাসির উত্তর দেই। আবার অফিস ছুটি হলে যখন বাসায় ফিরি, তখনো পরগা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে। মুচকি হেসে আমাকে স্বাগত জানায়। প্রতিদিন অফিসে যাবার সময়ে, আবার অফিস থেকে ফেরার সময়ে পরগার সাথে আমার দেখা হবেই। এটা যেনো একটা দৈনিক নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। একটুও ব্যতিক্রম নেই। এ ব্যতিক্রমের প্রত্যাশী আমরা কেউ নই। না আমি, না পরগা।
অফিসে যাওয়া আসার সময় ছাড়া আরো দু’টো সময়ে পরগা আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। মাসুদ সাহেবের পাশে হুদা সাহেবের বাসা। হুদা সাহেবের কনিষ্ঠ শালা তার বাসাতে থেকেই ডাক্তারি পড়ছে। পরগা আসার আগে আমি আমার নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো হুদা সাহেবের শালার কাছে গিয়েই গল্প করে কাটাতাম। আমার মুহূর্তগুলো পরম স্বাচ্ছন্দে কেটে যেতো। প্রতিদিন সন্ধের আগে তার সাথে একবার নিয়ম মাফিক আড্ডা দেয়া আমার চাই ই। শোভনের (হুদা সাহেবের শালা) ওখানে যাওয়া আসার সময়ও পরগা দরজায় দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে। আমিও সে হাসির প্রত্যুত্তরে একটু মুচকি হাসি। আমারও পরগার সাথে এভাবে প্রতিদিন অনেক না বলা কথা বলা হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি পরগা আমার জন্য প্রচুর টান অনুভব করে। আর পরগার পবিত্র মুখের ছবি ও সরস পেলবতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য প্রতিদিনকার এই নির্দিষ্ট রুটিনটি
আমরা দুজনেই মেনে চলি।
পাঁচ
কিছুদিন আগে থেকে একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করে আসছি। পরগা যেনো আমাকে কিছু একটা বলতে চায়।
অফিসে যাওয়া আসার সময় এবং শোভনের ওখানে যাওয়া আসার সময়। অথবা পরগা যখন আমার বাসায় আসে তখন। পরগাকে আমি বুঝতে পারি। ভালোবাসার মানুষদের হয়তো এভাবে অতি সহজেই বুঝতে পারা যায়। পরগা নিশ্চয়ই আমাদের পবিত্র প্রেমের পরিণতির ব্যাপারে আমার কাছে কিছু জানতে চায়। এভাবে আর কতদিন চলবে! আমিও যে কিছু একটা ভাবি না তাও নয়। আমার স্ত্রী আছে, পাঁচ মাসের কন্যা সন্তান আছে। এর উপর পরগার সাথে আমার গোপন প্রণয়! জানিনা কে কেমন করে নেবে। পরগার সাথে আমার এ প্রেম যদি মিলনে গিয়ে পরিনতি পায়, তাহলে আমার বিবাহকে সমাজইবা কেমন করে নিবে। যেমন করে করুক তাতে আমার কি? মুসলিম প্রথায় কি একাধিক বিয়ের প্রচলন নেই! শহুরে সমাজে একটু বেখাপ্পা দেখবে হয়তো। গ্রামীণ সমাজে তো এটা একটা মামুলি ব্যাপার। তবে সব কথার শেষ কথা হলো এই যে, পরগাকে ছাড়া আমি হয়তো বাঁচবো না। পরগা আমার একঘেয়েমি জীবনটাতে প্রাপ্রাণচাঞ্চল্যের জোয়ার এনে দিয়েছে। জীবনস্পৃহার সরল প্লাবনে আমি পরগাকে নিয়ে আমৃত্যু ভেসে চলবো। পরগা ছাড়া আমার জীবনটা যে একেবারেই নিথর হয়ে যাবে।
আমার এতোসব ভাবনার বাস্তবমূর্তি প্রমাণ করে দিয়ে
পরগা আমার সামনে এসে হাজির হলো। পরগার চেহারায় কেমন যেনো একটা বিভ্রান্ত ভাব। মাথার চুল অবিন্যস্ত। বুকের ওড়না স্থাণস্তূত। পরগার নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়েছে! আমি ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। পরগা, কি হলো আপনার? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? শান্ত হয়ে বসুন। পরগা সোফার উপরে নিথর হয়ে বসে পড়ল। পরগার মুখে এক ছোপ মলিনতা। আদরে
আদরে আমি সে মলিনতাকে মুছে নিতে চাইলাম। কিন্তু পরগা সাথে সাথে মুখ খুললো, ….
বিয়াই, আমি আপনার কাছে আজ কোন গল্প করতে আসিনি। একটা জিনিস চাইতে এসেছি। একান্ত ভিখারিনীর মতো।
পরগার কথায় আমার মনে একটা প্রবল উৎসাহের ঝড় এলো। আমি বললাম,…
ভিখারি নয় পরগা!
আপনি আমার রানী। নির্বিগ্নে আমার কাছে আপনি যা ইচ্ছে তাই চাইতে পারেন। ফেরাবো না, নিশ্চয়ই করে জানবেন।
তাতো বৈষয়িক কিছুই নয় বেয়াই
বৈষয়িক নয় তো আমি জানি পরগা, আর আমি জানি বলেই তো প্রস্তুত হয়ে আছি
সত্যি?
হ্যাঁ, পরগা
পরগা একটু মিষ্টি হাসলো। পরগার হাসিতে লজ্জার মিশেল। আমি পরগার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর মুখশ্রী দেখতে থাকলাম। ও আমার কাছে কি চাইতে এসেছে তা তো আমার অজানা নয়! পরগা আমাদের মেলামেশার একটা পরিণতি জানতে চায়। সব মেয়েরই তো এমনই ধারা। মেলামেশার
দীর্ঘসূত্রিতা তাদের সহ্যসীমার বাইরে। যত শীঘ্রই পারে, তারা তার মীমাংসা পেতে চায়। পরগা বলে চলে, …
আচ্ছা বিয়াই বলুন তো, আমরা তো মেয়ে। আমাদের কতটুকুই বা করার থাকে। আপনারা পুরুষ, আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন, তাহলে আমরা কতটুকুই বা পারি। কথায় তো বলে, মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। পরগার এ ধরনের কথা শুনে আমার মনে কান্না এলো। বুকের মধ্যিখানে আমি পরগার ভালোবাসার চাপা কান্নার
শব্দ শুনতে পেলাম। পরগার জন্য আমার মনে হাহাকার ধ্বনি উঠলো। পরগা আবার মুখ খুললো, …
আর তাই ভালোবাসা প্রেম বিবাহ এমনকি মিলনের ব্যাপারে ছেলেদেরই তো এগিয়ে আসা উচিত! কি বলেন আপনি?
হ্যাঁ, ঠিক পরগা। তোমার কথা শুনে আজ আমার একটা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আর তা হল এই যে, তুমি শুধু পরগা নামের নির্ভরশীল নারীই নয়, তুমি প্রেমের দিশারীও। তোমার মধ্যে যে এতো প্রেম আছে, আমি কখনো চিন্তা করিনি। পরগা, তুমি প্রেমময়ী সরস্বতী! তুমি পারবে তোমার প্রেমিককে প্রেম ও সেবা দিয়ে সুখী করে তুলতে। তোমার আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। পরগা, আর তোমাকেও যে কি দিয়ে ধন্যবাদ জানাবো, তা আমার জানা নেই। তবে শুধু এটুকু জেনে রেখো, তোমার পরশে জীবন আমার পরিপূর্ণ। পরগা, আমি ধন্য! আমি বিমোহিত! শান্তি, পরম শান্তি!...
আপনার সাথেও পরিচিত হয়ে আমি ধন্য বেয়াই। কতদিন ভেবেছি আপনি আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করবেন। আপনার মতো একজন আপন মানুষের কাছে আমি আমার মনের সমস্ত না বলা কথাগুলো এক এক করে খুলে বলবো। কেমন করে সংগোপনে এতো আপন হলেন বেয়াই! ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ।
পরগা যা বলতে এসেছিলো, একটার পর একটা গ্রন্থি খুলে আমার কাছে বলে যাও লক্ষ্মীটি। তোমার কোন অপূর্ণতা রাখবো না আমি। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমি তোমাকে খুশি করবো। পরগা, তুমি আমাকে যাচ্ছেতাই ভেবোনা। আমি সাহসী, স্বাধীনচেতা। মনের স্বাধীনতায় আমি বিশ্বাসী। আমি সামাজিক কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনা। সামাজিক অন্যায় নিয়ম-নীতিকেও আমি বিশ্বাস করি না। সামাজিক কুসংস্কার, অন্যায় নিয়ম নীতিকে ভয় করলে চলবে না। প্রেম-পবিত্র। সে পবিত্র প্রেমের বিজয়ের জন্য দরকার হলে লড়তে হবে। পরগা, সাহস হারাচ্ছ কেন?
তাইতো এসেছি বেয়াই আপনার কাছে বড় আশা নিয়ে। আপনার এ মহৎ সাহসটুকুকে ভিক্ষা পাওয়ার জন্য। আমি জানি আপনার প্রচন্ড সাহস আছে। আপনার সাথে শোভনের ভালো খাতিরও আছে। প্রতিদিন দেখি শোভনের সাথে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আপনার সিটিং হয়। কত যে মিল আপনার শোভনের সাথে। এমনটি আমি আর কখনো দেখিনি। আমি আর পারি না বেয়াই। আপনি যদি শোভনকে একটু বুঝান, তাহলে চির ঋণী হয়ে থাকবো। আপনি একটু বুঝান যে প্রেম করলে সাহসী হতে হয়। সমাজের কুসংস্কার, অনিয়ম নীতিকে ভয় করলে চলবে না। আমি মেয়ে হয়ে আর কতটুকুই বা পারি বলুনতো? রাত দু’টায় আপার চোখকে
ফাঁকি দিয়ে গোপনে নিমতলায় তার সাথে দেখা করা,
আর কত! তাকে একটু সাহস যোগাতে হবে বেয়াই। আপনি পারবেন তার মনে সাহস যোগাতে। কতদিন কথাটুকু বলার জন্য আপনার পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম! কখনো সাহস পেতাম না। আজ আপনার অভয় দানে আমার সবকিছু খুলে বললাম। বেয়াই প্লিজ! আমাকে একটু হেল্প করুন! প্লিজ! শোভনকে ছাড়া আমি যে বাঁচবো না! বেয়াই বাঁচবো না, বাঁচবো না!....
কি থেকে কি হয়ে গেলো আমি বুঝলাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারলাম, পরগা ও আমার মাঝের বাতাস ঘনীভূত হয়ে আমার ও পরগার মাঝখানে একটি শক্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের এপাশ থেকে আমি আর পরগাকে দেখতে পেলাম না।
দেয়ালের এপার
থেকে আমি তাই আমার স্ত্রী ও কন্যার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকলাম।
কোন মন্তব্য নেই
50