Header Ads

উপন্যাস: সুপ্রিয়া প্রিয়তমা পর্ব-১১ মহামিলন

পড়ুন উপন্যাস:  সুপ্রিয়া প্রিয়তমা পর্ব-১১ মহামিলন (ছবিটির নিচে) 

নিবেদন: উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট

আশির দশকের প্রথম ভাগ। তখন মোবাইল ফোন আসেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিফোনও ছিল না। তখন চিঠির মাধ্যমে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করতো সবাই। আর গ্রাম-গঞ্জে পাহাড়ি অঞ্চলে বৈদ্যুতিক বাতিও ছিল না। এরকম সময়-পরিবেশে যাপিত জীবনের কল্পকাহিনি  নিয়ে গড়া উপন্যাসটি। আশির দশকের সময়-পরিবেশ অনুধাবন করে উপন্যাসটির সকল পর্ব পড়তে থাকলে নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে। এটি এগারোতম পর্ব। প্রথম পর্ব হতে পড়ার অনুরোধ রইলো। প্রথম পর্বের লিংকটি এখানে দিয়ে দেয়া হলো 

উপন্যাস:  সুপ্রিয়া প্রিয়তমা

পর্ব-১১ মহামিলন

 

আগামীকাল ঈদ ! চারদিক ঈদের উৎসবে মুখরিত !

আমার ফার্মের শ্রমিকরা ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। কয়েকজন গার্ড এদিক-সেদিক টহল দিয়ে ফার্ম পাহারা দিচ্ছে।

আমার মনে আজ দুপুর থেকে শান্তি নেই। একবার কিছুক্ষণের জন্য সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। মা-বাবা এবং শেফালী সারাদিন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আমার এই অবস্থায় শেফালী মুষড়ে পড়েছে।

শেফালী আমাকে তার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসে। আমি আমার মনের কাছ থেকে ব্যাপারটা অনুভব করি। সারাদিন সে আমাকে ঘরের বার হতে দেয়নি। চোখের আড়াল হতে দেয়নি। আমি ফার্ম দেখতে চেয়েছিলাম। বিকেলের নরম রোদের প্রলোভন দেখিয়ে শেফালী আমার ফার্ম দেখার ইচ্ছেটাকে ভুলিয়ে রেখেছে।

আমি শেফালীকে বললাম, ……ফার্ম দেখতে যেতে হবে। এই ফার্ম যে আমার নয় শেফালী ! তুমি আমাকে যেতে দিচ্ছ না কেন? ফার্ম যে আমি একজনের মনের ইচ্ছে পূরণের জন্য তৈরী করেছি ! আমি যে আমার জীবনে কর্তব্য কাজে অবহেলা করিনি কখনো ! আমাকে যেতে দাও শেফালী ! আমাকে যেতে দাও ! আমাকে আমার কর্তব্য করতে দাও। তা না হলে সে যে দুঃখ পাবে ! সে যে আমার জন্য ফার্মের ওপ্রান্তে অপেক্ষা করছে ! আমাকে যেতে দাও শেফালী ! আমাকে যেতে দাও ! তা না হলে সে যে অনেক দুঃখ পাবে !

কে গো ! কে দুঃখ পাবে?...

শেফালির কথার উত্তর দিতে পারিনা আমি। ধ্বসে পড়া দেয়ালের মতো শেফালির বুকের মাঝে আমি ভেঙ্গে পড়ি শেফালী প্রবল জোরে আমাকে চেপে ধরে। হাত দিয়ে মাথার চুলে আঙ্গুল বুলায়। মুমূর্ষু  মন নিয়ে রক্তাক্ত স্মৃতির তরফড়ানি আমি দেখতে থাকি !

এখন বিকেল হয়েছে। শেফালির নরম রোদ সারা ফার্ম জুড়ে প্রশান্তির ডানা মেলেছে। ফার্মের সর্বত্র এক অনাবিল নির্জনতা বিরাজ করছে। আমি ঘরে বসে থাকতে পারিনি। শেফালী আমার জন্য এক গ্লাস গরম দুধ আনতে কিচেনে গিয়েছিলো। এই ফাঁকে আমি  ঘর থেকে পালিয়ে ফার্মে চলে এসেছি। সে যে ফার্মের আলো বাতাসে ভেজা নরম-মাটির সাথে তার অস্তিত্বকে গুলিয়ে একাকার হয়ে আছে ! আমি কি ঘরে বসে থাকতে পারি? তাহলে যে সে অসন্তুষ্ট হবে ! তার অপমান হবে !

 

নতুন রাস্তা চলে গেছে ফার্মের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত। সোজা ফার্মের মাঝখান দিয়ে। দুপাশে সারি সারি ফসল-শূন্য ক্ষেত। এই মৌসুমেই ধান বোনা হবে। সারা মাঠ জুড়ে ধান হবে। সবুজ ধানের চারা … ঝুরঝুরে বাতাস ধানের  শ্যামল ডগার উপর দিয়ে বয়ে যাবে… আমি হেঁটে হেঁটে সবুজের সমুদ্র দেখব… আর পাতার উপর খেলে যাওয়া দক্ষিণা বাতাসের ঢেউ গুনবো। আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলি। ফার্মের এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্ত পর্যন্ত। আমাকে এগুতেই হবে। তা না হলে সে যে অসন্তুষ্ট হবে !

পেছন থেকে শেফালির কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। পেছনে ফিরে তাকাই। শেফালী উদভ্রান্তের মতো দৌড়ে আমার দিকে আসছে !

আমি দ্রুত পায়ে সামনের দিকে দৌড়ে চলি। ওপ্রান্তে আমাকে পৌঁছুতেই হবে। সে যে ওখানেই আছে !

আমি ফার্মের ওপ্রান্তে পৌঁছে যাই। পেছন থেকে একটি আর্ত কণ্ঠ ভেসে আসে। আমি পেছন ফিরে তাকাই। আমি দেখতে থাকি, ….মিলি দৌড়ে দৌড়ে আসছে আমার দিকে.. হাত উঁচিয়ে আর্ত স্বরে চিৎকার করছে, ….পলাশ, দাঁড়াও, প্লিজ ! আমি আসছি ! লক্ষীটি ! তুমি পড়ে যাবে ! দাড়াও ! দাড়াও !...


পেছন ফিরে আমি দেখতে থাকি - মিলির চুল শাড়ির আঁচল বিপরীতমুখী বাতাসে পতপত করে উড়ছে। নতুন রাস্তার সাদা সাদা মাটি রুপালি রং ছড়িয়ে মিলির দৌড়ে আসার পথটুকুকে আলোকিত করছে। আমি হাত বাড়িয়ে মিলিকে আমার বুক পেতে দেই। মিলি আমার বুকের কাছে এসে থেমে যায়। আমার মুখের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। এবং পরে অশান্ত ইচ্ছে নিয়ে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আমি মিলিকে জড়িয়ে ধরি। ওর পিঠের ওপর দিয়ে আমার ডান হাত খানা বুলিয়ে চলি। আবেগ জড়িত আহত কন্ঠে বলি....

মিলি, তুমি আমাকে এতো ভালোবাসতে ! মিলি, আমি যে বুঝতে পারিনি !...

শেফালী আমার বুক থেকে মাথা তুলে নেয়। অবোধ দৃষ্টি দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, মিলি কে গো ! মিলি কে?...

আমি শেফালির মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকি। চাপা ফিসফিসে গলায় বলি, তুমি শেফালী – তুমি ! আজ থেকে তোমাকে আমি মিলি বলেই ডাকবো।

শেফালী ফ্যালফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি পশ্চিম আকাশের অস্তগামী সূর্যটাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকি,.... লাল আকাশ ! সারা দিগন্ত জুড়ে লাল আবিরে ছাওয়া। মিলির ভালোবাসার মতো নীলচে লাল ! রক্তাক্ত-নীলাভ !

আমার মনে হলো - আকাশের ওই লালের সাথে মিলির নীল ভালোবাসা একাকার হয়ে মিশে আছে। আমি বোবা দৃষ্টি দিয়ে নীলচে-লাল আকাশটাকে দেখতে থাকি …


 


উপসংহার:

ঈদের আগের দিনের দুপুর। সাইট্রাস ফার্মের হর্টিকালচারিস্টের কাছ থেকে ভি.পি. পার্সেলসহ একটি চিঠি এসেছিলো। ভিপি পার্সেল করা ছোট্ট বাক্সটি খুললাম। ভেতরে কিছুই নেই। বাক্সের এক কোণে ছোট্ট একটি লাল বাক্সে সযতনে রাখা একটি মালা। পুরনো। এখনো সুন্দর ! শুকনো বকুল ফুলের মালা।

হর্টিকালচারিস্টের চিঠিখানা খুলে এক পলকে পড়ে গেলাম,...

‘পলাশ সাহেব ! দীর্ঘ তিন মাস ছুটি ভোগ করে মিলি গতকাল অফিসে জয়েন করেছিলো। পার্সেলকৃত বাক্সটি আমার হাতে দিয়ে অনুরোধ করেছিলো - আমি যেন আপনাকে পৌঁছে দেই !

আজ বাক্সটা আপনার ঠিকানায় পার্সেল করতে এসে সংবাদ পেলাম - গতরাতে ঘুমের বড়ি খেয়ে মিলি আত্মহত্যা করেছে।

ইতি -মাসুদ আহমেদ।‘

 


কোন মন্তব্য নেই

50

Blogger দ্বারা পরিচালিত.