বড় গল্প: বিধ্বস্ত মোহনা
বিধ্বস্ত মোহনা
এক
পাঁচ বছর পরে ডক্টর রেহমান যখন চেম্বারে
এসে
বসলো, একটা অনুভূতি তার শিরা উপশিরাগুলোতে বাহিত হতে হতে তার মনোন
জগতে এক ভালোলাগা ভালোলাগা অনুভূতির প্রস্রবণ বইয়ে দিলো। ভার্সিটির পাবলিক
রিলেশন্সের প্রভাষক ম. শা. রেহমান । যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি সেরে মিস্টার রেহমান ডক্টর রেহমান হলেন এবং অধ্যাপক হবার বাসনা নিয়ে সকল চার্জ বুঝে নিলেন। যথারীতি ক্লাস
শুরু হবে আগামী দিনগুলো থেকে ।
শিক্ষকতা
পেশার দায়িত্ব চালিয়ে যাবার কথা মনে হতেই ডক্টর
রেহমানের মনে হলো - বর্তমান জীবনটি
যেনো তার পুরাতন এক জীবনের নতুন সূচনা । তবে
কোনক্রমেই ডক্টর রেহমান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারলো না যে, সে তার বর্তমান জীবন নিয়ে পূর্বাপেক্ষা অধিক সুখী হতে পারবে । এ মুহূর্তেই ডক্টর রেহমান অনুভব করল যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসবহুল সুখকর জীবনের আলোপ্রভার কাছে ভার্সিটির এই ছকে বাঁধা জীবন অত্যন্ত নিষ্প্রভ । তবুও ডক্টর রেহমান এই বলে সান্তনা পেলো যে, এখানে থাকাকালীন সময়ে সে চাকরি নিয়ে সারা জীবনের জন্য বাইরে চলে যাবার সুযোগ খুঁজবে । কেননা পাঁচ বছরের জন্য এই ভার্সিটির বাধ্যবাধকতা
তাকে মানতেই হবে । কারণ ভার্সিটির আর্থিক সহায়তা নিয়ে পিএইচডি করার জন্য ভার্সিটির সাথে এই ধরনের চুক্তিই সে করেছিল । বাইরে চাকরি নিয়ে তার সাংসারিক একটু অসুবিধা হতে পারে । তবে সে অসুবিধাটা ডক্টর রেহমান পুষিয়ে নিতে পারবে
।
পকেট থেকে দেশলাই বের করে ডক্টর রেহমান এক শলা সিগারেট ধরালো
এবং
কাগজ-কলম নিয়ে ভবিষ্যতে ক্লাশ নেয়ার জন্য নোট পত্রের প্লান প্রণয়ন
করতে মনোদিবেশ করল ।
ডক্টর রেহমানের মনে হলো বাংলাদেশের সিলেবাস
কারিকুলামে যে সমস্ত বিষয়বস্তু ঢুকানো হয়েছে তা ডক্টর রেহমানের অর্জিত জ্ঞানের আলোকে একটা গোজামিল ছাড়া আর কিছুই নয় । ডক্টর রেহমানের মতে, বর্তমানকার চালু সিলেবাসের পরিবর্তন আবশ্যক । কেননা এ সমস্ত বিষয়ে আধুনিক চিন্তা চেতনার সূচনা না করলে ছাত্র-ছাত্রীদের মন-মানসিকতা একেবারেই বাঙালিপনাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে । উন্নত মন-মানসিকতা সমৃদ্ধ পাশ্চাত্য সভ্যতার ছোঁয়াও তারা পাবে না । ডক্টর রেহমান ভাবলো পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলেই সে নতুন ধাঁছের একটি যুগসই সিলেবাস পেশ করবে ।
দুই
নতুন সিলেবাস প্রণয়ন করতে বসে ডক্টর রেহমান অনুভব করল যে বাংলাদেশের
বর্তমানকার প্রশাসনিক কাঠামোর ব্যাপারে তার অনেকগুলো তথ্য জানা অতি আবশ্যক । গত পাঁচ বছর ধরে প্রশাসনিক কাঠামোর অনেক রদবদল হয়েছে । এ পরিপ্রেক্ষিতে উন্নততর সিলেবাসের প্রণয়ন করতে হলে বর্তমানে
প্রচলিত প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন করা অতি প্রয়োজন । এ উদ্দেশ্যে ডক্টর রেহমান মনস্থির করলো যে এ ব্যাপারে সুকৌশলে ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য নেবে । পরের দিনই ক্লাসে ডক্টর রেহমান ছাত্রীদের কে ‘বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিবর্তন’ শিরোনামে একটি এসাইনমেন্ট দিয়ে দিলো । ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পরোক্ষভাবে এটাও জানিয়ে দিলো যে পরবর্তী সেমিস্টারের নাম্বার এই এসাইনমেন্টের উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে
।
তিন
কিছুদিন ধরে ডক্টর
রেহমান একটা ব্যাপার তাচ্ছিল্যভরে লক্ষ করল যে সেকেন্ড পার্টের রোল
নম্বর পঁচিশ প্রতিনিয়তই তাকে ফলো করছে । প্রথমদিকে রোল
নম্বর পঁচিশকে দেখে কেমন যেনো মনে হয়েছিল ডক্টর রেহমানের । পরে একটি সূত্র ধরে ডক্টর রেহমান জানল যে রোল নাম্বার পঁচিশ তার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের মেয়ে । ডক্টর রেহমান পিএইচডি করতে দেশের বাইরে গেলে এই ডিপার্টমেন্টে মেয়েটি
ভর্তি হয় । এবং পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতেই তার বিয়ে হয়ে যায় । সেকেন্ড পার্টে প্রমোশন পাওয়ার পরই রোল নাম্বার পঁচিশ তার ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর সাথে দেশের
বাইরে চলে যায় । সেখানে তিন বছর কাটিয়ে গত বছর দেশে ফেরে এবং এ বছরের প্রথমদিকে সেকেন্ড পার্টে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে । ডক্টর রেহমান কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছিল না, কেন মেয়েটি তাকে ফলো করছে । ডক্টর রেহমান তার অতীতকে ভাববার চেষ্টা করে ।
ডক্টর
রেহমান তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র । সেমিস্টারের পরীক্ষা এবং এসাইনমেন্ট এর ব্যাপারে ডক্টর
রেহমান সময়ে অসময়ে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের চেম্বারে যেতো । প্রতিদিনই ডক্টর
রেহমান দেখতো, টানা টানা পটলচেরা চোখের ক্ষীণাঙ্গী একটি মেয়ে চেয়ারম্যান স্যারের চেম্বারে স্বচঞ্চল ছোটাছুটি করে বেড়াতো । এ চটপট
মেয়েটিকে তার ভালো লেগে গেলো । এরপর থেকে মেয়েটির সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করেছিল
ডক্টর রেহমান । মেয়েটির অমনোযোগী আচরণ ভালোলাগা চঞ্চলতার যাতনা সইতে
সইতে ডক্টর রেহমান পাবলিক রিলেশনস এর ফাইনালে ফার্স্ট ক্লাস পায় এবং এই ডিপার্টমেন্টেই লেকচারার হিসেবে চাকরি নেয় । মেয়েটি তখন ইডেনের ছাত্রী ছিল,
আর
সে সময়ে ভালো রেজাল্টের আশায় লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে পড়ল । সেজন্যই হয়তো মেয়েটি তার অধ্যাপক বাবার চেম্বারে আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল ।
এর পরের পাঁচটি বছর ধরে ডক্টর রেহমান মেয়েটির আর কোন খবর রাখেনি
। যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি সেরে
পাঁচ বছর পরে আবার ক্লাস নিতে গিয়ে ডক্টর রেহমান দেখল যে অপরূপা মেয়েটি আর ক্ষীণাঙ্গী
অপরূপা নেই । রোল নাম্বার পঁচিশ এখন ধূপশী দেহের পাহাড়ি টিলার মতো । তবে একটা ব্যাপার ডক্টর রেহমান মনে মনে মেনে মেনে নিল যে, দেহে অতিরিক্ত মাংস ও মেদের গুণন হলেও চেহারার কমনীয়তা এবং পটলচেরা চোখের কাজল মায়া একটুও কমেনি । বরং চঞ্চল চাহনি ও চলাফেরায় কোথায় যেনো একটা ব্যাক্তিত্বশীলতা যোগ হয়েছে
। আরো একটি ব্যাপার ডক্টর রেহমান লক্ষ্য করল যে, রোল নম্বর টুয়েন্টি ফাইভের পূর্বেকার স্লিম পোশাক পরিচ্ছদ খসে গিয়ে
তদস্থলে স্থুল দেহের উপর আটপৌরে তাঁতের শাড়ি জায়গা করে নিয়েছে । এ ব্যাপারটা ডক্টর রেহমানের মোটেও ভালো লাগলো না । মেয়েটির এ ধরণের বিবর্তন ডক্টর রেহমানের কাছে একটা অনাবশ্যক পরিবর্তন বলে মনে হলো । ডক্টর রেহমান মনে মনে একটু হাসলো ধূপশীদেহী সরস্বতীবেশী মেয়েটি কিভাবে সাত বছর আগেকার ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি আশা করতে পারে ? একটু মডার্ন হলে না হয় অন্য কথা ছিল।
মেয়েটির এ অনাবশ্যক ফলোআপ ডক্টর রেহমানের কাছে বিরক্তিকর বাড়াবাড়ি বলে মনে হলো এবং একটু পরেই জ্বলন্ত সিগারেটে একটি লম্বা টান দিয়ে ব্যাপারটিতে অযথা চিন্তা করা সময়ের অপব্যাবহার
মনস্থির করে ডক্টর রেহমান কাজে মনোনিবেশ করল ।
চার
ছাত্র-ছাত্রীদের সাবমিট করা অ্যাসাইনমেন্ট গুলো পর্যালোচনা করতে বসে ডক্টর রেহমান অতি আশ্চর্য হয়ে হিসেব কষে দেখল যে রোল নাম্বার পঁচিশ এসাইনমেন্ট সাবমিট করেনি
।
ব্যাপারটা ডক্টর রেহমানের ব্যক্তিত্বে আঘাত হানলো
। একজন শিক্ষকের আদেশকে উপেক্ষা
করার ব্যাপারটি শিক্ষকতা পেশায় অপমানকর বলে মনে হলো ডক্টর রেহমানের
কাছে । পরদিন ক্লাসে ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশকে তার এসাইনমেন্ট সাবমিট করার কথা স্মরণ করিয়ে দিলো । এর পরের কয়েকটি ক্লাশেও যখন মেয়েটি এসাইনমেন্ট সাবমিট করলো না, অগত্যা ডক্টর রেহমান তখন পিয়ন পাঠিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশকে ডেকে পাঠালো
।
শান্ত গাম্ভীর্য নিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানের চেম্বারে সামনে এসে দাঁড়ালো ।
−পরপর তিন ক্লাসে এসাইনমেন্ট সাবমিট করার জন্য তোমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, অথচ আজ পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টে তোমার কোন এসাইনমেন্ট জমা পড়েনি । এসাইনমেন্ট লিখার ব্যাপারে ডিপার্টমেন্ট থেকে কোন প্রকার সাহায্য আশা কর কি?
না ।
তাহলে?
আমি এ সমস্ত অ্যাসাইনমেন্ট ফ্যাসাইনমেন্ট লিখতে পারবো না । আমার এতো সময় নেই ।
কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তোমাকেতো লেখাপড়া করতে হবে!
তা হোক,
এ
সমস্ত এসাইনমেন্ট লিখা আমাকে দিয়ে হবে না । আমি পারবো না ।
রোল নাম্বার পঁচিশের এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ জবাবে ডক্টর রেহমানের মেজাজে আগুন ধরে যায় এবং ডক্টর
রেহমান চেচিয়ে ওঠে…..
একজন টিচারের সাথে কেমন ধরনের ব্যবহার করতে হয় তা নিশ্চয়ই তোমার জানার কথা…
মাফ করবেন, ন্যাকামো ব্যবহার আপনি
অন্তত আমার কাছ থেকে আশা করবেন না । আর তাছাড়া আমি আপনাকে অন্যরকম চোখে দেখি । আপনার সাথে ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্ক মেইনটেইন করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না ।
তোমার নিশ্চয়ই স্মরণ করা উচিত এটা ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট । একটা অভিসার কক্ষ নয় ।
অন্তত আমি তাই মনে করি । আর কোথাও না হোক অন্তত এই রুমটিতে
নয় । রোল নাম্বার পঁচিশ! ইউ আর কোয়েট ইমোশনাল । ইউ শুড মেনটেইন এ মিনিমাম কার্টেসি
।
তা আমি কি করবো । কি করতে পারি । আমি যে......
তুমি যে……… এই ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপকের মেয়ে । তাই কি তুমি বলতে চাও?
না না, সে অহংকার আমার নেই । আমি যে কেমন হয়ে যাচ্ছি তা আপনাকে কেমন করে বোঝাবো ।
এটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার । এ সমস্ত আমার কাছে প্রকাশ করছ কেন? আর আমি কোনো এক্সকিউজও শুনতে চাই না । এখন আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, এ ডিপার্টমেন্টে পড়তে হলে এবং অন্তত আমার সাবজেক্টে পাশ করতে হলে সময়ে সময়ে যে সমস্ত এসাইনমেন্ট দেওয়া হবে সেগুলো সময়মতো সাবমিট করতে হবে ।
তা আপনার সাবজেক্টে পাস নাইবা করলাম । আর আমি ফেলইবা করলাম তাতে আপনার এতো মাথাব্যথা কেন । আর আমাকে ডেকে এনে এতো বকাবকিইবা করছেন কেন?
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করে রোল নাম্বার পঁচিশ প্রায় দৌড়ে চেম্বার
থেকে বেরিয়ে গেলো ।
ডক্টর
রেহমান প্রমাদ গুনলো । রোল নাম্বার পঁচিশের
কাছ
থেকে এ ধরনের ব্যবহার পাবে - আশা করেনি ডক্টর রেহমান । অপমানে ডক্টর রেহমান মাথার চুল ছিড়তে লাগলো ।
এ অপমানকর
পরিস্থিতি লাঘব করতে ডক্টর রেহমান পকেট হতে লাইটার বের করে একটি সিগারেট পোড়াতে থাকলো । ধোয়ার কুণ্ডলীর মত অজস্র চিন্তার যটা পাঠাতে পাকাতে যখন আর কোনো কুল কিনারা পেলো না, তখন অবশেষে ডক্টর রেহমান সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে ড্যাম কেয়ার জ্ঞান করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল
।
পাঁচ
পরদিন সকালে ডক্টর রেহমান যখন ডিপার্টমেন্টে এলো তখন অতি আশ্চর্য হয়ে দেখতে পেলো যে রোল নাম্বার পঁচিশ তার চেম্বারে একা বসে আছে । চেম্বারে
ঢুকে ডক্টর রেহমান চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই মেয়েটি সহাস্যে জিজ্ঞেস করল ……
কালকের ব্যবহারে রাগ করলেন?
তড়িৎ ডক্টর
রেহমান চেয়ার ছেড়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো …………..না রাগ করিনি । নাউ আইছে.. ইউ গেট আউট !
রোল নাম্বার পঁচিশও উঠে দাঁড়ালো এবং টানা টানা প্রলম্বিত দৃষ্টি দিয়ে মুখ খানাকে মলিন করলো ..
আপনি কি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন?
ইয়েস, তুমি এখন আসতে পারো
।
রোল নাম্বার পঁচিশ হঠাৎ
দাঁড়িয়ে পড়ে, ডক্টর রেহমানের মুখমন্ডলের উপর আগুন চোখের দৃষ্টি ঝাড়ে, এবং হঠাৎ করেই আবার ঝপাৎ করে বসে পড়ে …………
আমি যাব না, আপনি আমাকে কিভাবে তাড়াবেন তাড়ান
।
ডক্টর রেহমান স্তম্ভিত
হলো এবং ভাবলো - এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং এ নিয়ে ডিপার্টমেন্টে কুৎসিত সমালোচনা উঠবে । একটা কালচার্ড মডার্ন মেয়েকে কেন্দ্র করে সমালোচনা হলে ডক্টর
রেহমানের তেমন কোন আপত্তি থাকতো না । কিন্তু আনকালচারড একটি মেয়েকে জড়িয়ে কুৎসিত সমালোচনা হোক তা ডাক্তার রেহমান চায়না
।
অগত্যা ডক্টর রেহমান মনে মনে হার মানে এবং একটি সিগারেট জ্বালিয়ে উন্নততর সিলেবাস প্রণয়নে মনোনিবেশ করে । কিন্তু রোল নাম্বার পঁচিশ বেশিক্ষণ চুপ করে থাকেনা । একটু নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে আবদারি কণ্ঠে বলে……
এই যে, এক কাপ চা খাওয়ান না, বড় চেষ্টা পেয়েছে
!
ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশের
দিকে একবার ফিরে তাকালো এবং বড় আশ্চর্য হলো । এ কোন ধাঁছের মেয়েরে বাবা ! লজ্জা বলতে কি কিছুই নেই? পরক্ষনেই চোখ দুটি নামিয়ে ডক্টর রেহমান আবার কাজে মনোনিবেশ করল । রোল নাম্বার পঁচিশ এবার চেচিয়ে উঠলো…….
খাওয়ান
না এক কাপ চা, তেষ্টা পেয়েছে যে বড় !
ডক্টর রেহমান কোন কথা বললো না, চুপটি করে কাগজের উপর লিখতে লিখতে কাজের ভেতর একাগ্রহ হলো । জ্বলন্ত সিগারেট থেকে একটানা প্রলম্বিত ধোঁয়া উড়তে থাকলো
।
ডক্টর রেহমান দুঃখ করল না। কিন্তু নিমেষে কি থেকে হয়ে গেলো । রোল নাম্বার পঁচিশ দাঁড়ালো এবং ডক্টর রেহমানের হাত থেকে কাগজ-কলম কেড়ে নিয়ে
এদিক সেদিক ছুড়ে ফেললো । বিহ্বল ডক্টর রেহমান শুধু তাকিয়েই থাকলো এবং কিছু একটা বুঝে ওঠার আগেই রোল নাম্বার পঁচিশ স্ববেগে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো ।
ছয়
ডরমিটরিতে ফিরে ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশের বাড়াবাড়ির ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে বসলো । ডক্টর রেহমান ভেবে পাচ্ছিলোনা না যে, সরস্বতিবেশি গম্ভীর প্রকিতির মেয়েটি কেমন করে হঠাৎ এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে পারে । কেমন করেইবা তার গাম্ভীর্য প্রকৃতির দিক পরিবর্তন করে চঞ্চলা হয়ে ওঠে । তবে ডক্টর রেহমান একটি
সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলো যে এর একটা বিহিত করতেই হবে । কেননা ব্যাপারটা তার ডিগনিটিতে ইন্টারপ্রেট করছে । এবারে ডক্টর রেহমান মেয়েটিকে
কন্ট্রোলের নানাপ্রকার উপায় নিয়ে ভাবলো । কিন্তু কোনোটিতেই ডক্টর রেহমান আশ্বস্থ হতে পারল না । কেননা যে উপায়ের কথাই ভাবা যায় না কেন, সেটাতেই ডক্টর রেহমানকে মেয়েটার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে ধরে নিতে হয় । রোল নাম্বার পঁচিশের মতো আনকালচার্ড আনসিভিলাইজড
একটি মেয়েকে ডক্টর রেহমান স্বাভাবিকের চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে
না
। এবং অবশেষে ডক্টর রেহমান এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হলো যে, মেয়েটাকে সে কোন প্রকার বাড়তি আমল দেবে না এবং এমন ভাব দেখাবে যেনো ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশের মত মেয়েদেরকে সদা সর্বদা অপছন্দই করে থাকে
।
সাত
পরদিন সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হলে ডক্টর রেহমান অনুভব করল যে - আজ আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার । ডক্টর রেহমানের আরো মনে হলো যে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে বসতেই রোল নাম্বার পঁচিশ আজ আবার কোন কাণ্ড ঘটায়ে বসে ! আজ ডিপার্টমেন্টে না গেলে রোল নাম্বার পঁচিশের মানুষিক
ভাবনার ডাইভারশন হতে পারে । এ ভেবে ডক্টর রেহমান একটি ইংরেজী উপন্যাস হাতে নিয়ে টেবিলে বসে পড়ল । বাংলাদেশে বাঙ্গাল লেখকদের হ্যাংলামো উপন্যাস সাধারণত ডক্টর রেহমান স্পর্শ করে না । কেননা বাংলা উপন্যাসের ভাবগুলোকে ডক্টর রেহমানের রসমালাইয়ের মত মনে হয় । প্রাশ্চাত্য ভাবধারার প্রেমাস্পদ ডক্টর রেহমান তাই ইংরেজি উপন্যাস পড়াতে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগী হয়ে পড়ল
।
ইংরেজি
উপন্যাসের রোমাঞ্চের জগৎ পেরিয়ে ডক্টর রেহমান যখন সাসপেন্সের পাতায় এসে চোখ বুলাচ্ছিল, এমন সময় সশব্দে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো রোল নাম্বার পঁচিশ । রোল নাম্বার পঁচিশ কে দেখে ডক্টর রেহমান ভূত দেখার মত লাফিয়ে উঠলো
……
তুমি?
হারে, আর বলবেন না । আপনাদের দারোয়ানটা কি ঝামেলাই না বাঁধিয়ে দিলো
!
কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না । আমিও নাছোড়বান্দা । বললাম, উনি আমার ডিপার্টমেন্টের
শিক্ষক এবং আমি উনার ছাত্রী । উনার সাথে দেখা করা আমার খুব জরুরী । দেখা না হলেই নয় । রোল নাম্বার পঁচিশ কাঁচভাঙ্গা শব্দে হেসে
উঠলো, হাসি থামিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশ প্রশ্ন করলো ………….
তা এবারে বলুন, আজ ডিপার্টমেন্টে কেন গেলেন না ।
ভাবলাম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিনা আবার । তাইতো দেখতে এলাম ।
ডক্টর রেহমান স্তম্ভিত হয়ে গেলো । বিরক্তিকন্ঠে চেচিয়ে উঠলো…..
তাই বলে কি ডরমেটরিতে?
কথা শুনেই রোল নাম্বার পঁচিশ আশ্চর্য হলো, পটল চেরা চোখ দুটোকে কপালে তুলল…..
ডরমিটরিতে এসেছি তো কি হয়েছে । আপনার অসুখ করেছে ভেবেই তো আমি ডর্মিটরিতে
এলাম ।
আমার অসুখ হলে তাতে তোমার কি ? আচ্ছা তুমি কেন বুঝতে পারছ না যে আমি তোমাকে পছন্দ করছি না । তুমি যে আমাকে ফলো করছো তা আমার পছন্দ নয় । তুমি এটাও কেন বুঝতে পারছ না যে তোমার মত বোটকা পরহেজগার মত দেখতে মেয়েদের আমার ঘেন্না লাগে
!
রোল নাম্বার পঁচিশ ফ্যালফ্যাল
চোখে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে থাকল এবং কোন শব্দ না করেই
নিঃশব্দে ধীরপদে কক্ষ ত্যাগ করল।
আট
পরদিন ডিপার্টমেন্টে আসার আধঘন্টা পর দরজার পর্দা সরিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানের চেম্বারে প্রবেশ করে । ডক্টর রেহমান চকিত হয়ে দাঁড়িয়ে রোল নাম্বার পঁচিশকে দেখতে থাকে এবং আশ্চর্য হতে থাকে - একি অবস্থা রোল নম্বর
পঁচিশের ! পায়ে হাই হিল আর পরনে স্লিম কামিজ । আর কোথায় সে সরস্বতী গোছের সাজগোজ
।
হালকা সবুজ রঙের কামিজের সাথে গলায় জড়ানো ফিনফিনে জর্জেটের প্রিন্টেড
ওড়না । চোখে কাজল ও ঠোঁটে গাঢ় করে মাখা লিপিস্টিক । সবমিলিয়ে অন্য সাজের রোল নাম্বার পঁচিশ । ডক্টর রেহমান আরো আশ্চর্য হয় যে রোল নাম্বার পঁচিশকে এখন আর বোটকা বোটকা মনে হচ্ছে না । ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশকে দেখতে থাকে, এবং সাত বছর আগেকার পটল চোখের ক্ষীণাঙ্গী
মেয়েটিকে স্মরণ করতে থাকে । ডক্টর রেহমান মনে মনে সেই পটলচেরা খিনাক্ষী মেয়েটি এবং বর্তমানের রোল নাম্বার পঁচিশের মধ্যকার পার্থক্যটুকুকে হিসেব করতে থাকে
।
কিন্তু রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানকে সে সুযোগ বেশিক্ষণ দিলো না । কিছু একটা না বলেই রোল নাম্বার পঁচিশ ক্ষিপ্র
পদে
চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো ।
নয়
কিছুদিন ধরে ডক্টর রেহমান হেঁয়ালিভাবে লক্ষ করল যে রোল নম্বর
পঁচিশকে ক্লাসে অথবা কোথাও দেখা যাচ্ছে না । ডক্টর রেহমান এক ফাঁকে সেমিনার রুমেও দেখে এলো, এবং সেন্টপার্সেন্ট আশ্বস্থ হলো যে আসলে রোল নাম্বার পঁচিশ কয়েকদিন ধরেই ভার্সিটিতে আসছে না ।
অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে সিগারেট ফুটতে-ফুঁকতে ডক্টর রেহমান ব্যাপারটার নানা ভাবে ব্যাখ্যা করতে
থাকলো । এবং প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিল যে রোল নাম্বার পঁচিশ জব্দ হয়েছে । কিন্তু পরক্ষণেই আবার সে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হলো, কেননা রোল নাম্বার পঁচিশের জব্দ হওয়ার পেছনে যে উত্তর
বা যুক্তিগুলোকে দাঁড় করানো যায়, সেগুলো তো গৌণ । বরং নানাবিধ অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা ঘটিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানকেই জব্দ করেছে
।
কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছুবার পেছনেওতো কোন মুখ্য শ্রেণীর যুক্তি দাঁড়া করানো যাচ্ছে না । যদি রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানকে জব্দ করেই থাকে তাহলে এতোদিন ধরে রোল নাম্বার পঁচিশের গা ঢাকা দিয়ে থাকার কারণটাই বা কি । অবশেষে এ ব্যাপারে চিন্তা করতে করতে ডক্টর রেহমান যখন আর কোন কূলকিনারা পেলো না, তখন ব্যাপারটাকে জ্বলন্ত সিগারেটের ধোঁয়ার মত উড়িয়ে দেয়াটাকেই
সমীচীন বলে মনে করলো । এবং রোল নাম্বার পঁচিশের
এসাইনমেন্টের আশা ছেড়ে দিয়ে ডক্টর রেহমান বাকি এসাইনমেন্ট গুলো নিয়ে বসলো ।
এসাইনমেন্ট গুলোকে পড়তে পড়তে ডক্টর রেহমানের মনে হলো, বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তিতে বর্তমান পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক । এই উদ্দেশ্যে ডক্টর রেহমান ছোটখাটো দু - একটি নোট লেখার চিন্তা করল এবং কাগজ-কলম টেনে হাতের কাছে নিতেই তার টেবিলের সামনে রোল নাম্বার পঁচিশকে দেখতে পেলো । এ সময়ে ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশের আগমনটাকে অনাবশ্যক ঝামেলা বলে জ্ঞান করলো । কাজে মন দেয়ার জন্য কাগজের উপর ঝুঁকে পড়ল । লেখা আরম্ভ করতেই ডক্টর রেহমান বাধা প্রাপ্ত হলো । কেননা ইতিমধ্যেই রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানের হাত থেকে কলমটি কেড়ে নিয়েছে । ডক্টর রেহমান বিরক্তি বোধ করল এবং আগুনঝরা চোখ নিয়ে রোল নাম্বার পঁচিশের দিকে তাকালো । ডক্টর রেহমান আশ্চর্য হলো, কেননা হাতে কলম নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রোল নাম্বার পঁচিশ মিটিমিটি হাসছে
।
ডক্টর রেহমানের মেজাজে আগুন ধরে যায় । কিন্তু রোল নাম্বার পঁচিশ এর মেজাজের কথা মনে হতেই নিজেকে প্রশমিত করে । অগত্যা ডক্টর রেহমান চুপ করে থাকারই সিদ্ধান্ত নিল । আঁটসাঁট জামা পরা রোল নাম্বার পঁচিশের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকলো
ডক্টর রেহমান ।
এই যে লেকচারার সাহেব,
দেখছেন কি এমন করে?
ডক্টর রেহমান প্রমাদ
গুনলো । গলায় একটু সমঝোতার সুর তুলে বললো…
আচ্ছা তোমার মতলবটা কি বলোতো ? তুমি আমার পেছনে লেগেছ কেন এমন করে?
রোল নাম্বার পঁচিশ হাসে । আপনিও তো লেগেছিলেন একদিন আমার পেছনে
।
সেতো অনেক আগের কথা । তখন তো আমি ছাত্র ছিলাম
।
আমিও তো এখন ছাত্রী । আমার এখনকার বয়সটা আপনার তখনকার লেভেলেই তো আছে?
আচ্ছা বুঝতে চাচ্ছো না কেন যে মেয়েদের এতো বাড়াবাড়ি করতে নেই । আর তাছাড়া আমার একটা সমাজ আছে । তুমি নচেৎ আমাকে টিচার হিসাবে না মানলে । কিন্তু অন্য ছাত্রছাত্রীদের আমার উপরে যেনো অন্তত শ্রদ্ধা টুকু থাকে, তা তো তুমি দেখবে
।
আপনি এতো বকছেন কেন ? আমি তো আপনার কাছে উপদেশ নিতে আসিনি । যে জন্য এসেছি সেটা শুনুন
।
আমি চলে যাব ।
কি জন্য এসেছ আমার কাছে?
আমাকে দেখুন, আমাকে আপনার কেমন লাগছে
?
আরে বিরক্ত করছো কেন ? তোমাকে তো আমি বলেছি যে এটা শিক্ষাঙ্গন । এটা অভিসার নয় ।
আপনার কাছে এটা জানতে চাইনি । আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটা বলুন আমি চলে যাব এবং ডিস্টার্ব করবো না ।
ডক্টর রেহমান বিপদে পড়ে যায় । এ আপদ বিদায় করাও দরকার । কিন্তু ডক্টর রেহমান মেয়েটির কাছে হার মানতে পারে না । ডক্টর রেহমান উভয় কুল রক্ষা করতে যুৎসই একটি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে এবং মনের ভেতর থেকে হাতরে হাতরে তাড়াহুড়া করে একটি উত্তর বেছে নেয় । ছোট্ট করে বলে..
ভালো ।
আবার বলুন
।
ভালো ।
আর একবার
।
ভালো ।
থ্যাঙ্ক ইউ - বলেই রোল নাম্বার পঁচিশ ডান হাত দিয়ে কলমটি এগিয়ে ধরে । ডক্টর
রেহমান হাত বাড়িয়ে কলমটি নেয় । রোল নাম্বার পঁচিশ মিষ্টি হাসে এবং প্রায় নাচতে নাচতেই চেম্বার ত্যাগ করে ।
ডক্টর রেহমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং মনে মনে মেয়েটিকে অভিসম্পাত করতে থাকে
।
দশ
ডক্টর রেহমানের মনে নতুন একটি সিলেবাস প্রণয়ের চিন্তার চাইতে রোল নাম্বার পঁচিশের বিরক্তিকর জ্বালাতনের উদ্বেগ বেড়ে গেলো । যখনই ডক্টর রেহমান কাগজ-কলম নিয়ে সিলেবাস প্রণয়নে ব্যস্ত হয়ে যায়, তখনই রোল নাম্বার পঁচিশ এর সম্ভাব্য জ্বালাতনের ভয় এসে জড়ো হয় । কলমের প্রত্যেকটি খোঁচার আগে ডক্টর রেহমানের মনে হয়
-
এই বুঝি রোল নাম্বার পঁচিশ এলো । ফলে গত কদিন ধরে সিলেবাস লিখতে বসে উল্লেখযোগ্য কোনো পয়েন্ট ডক্টর রেহমান লিখতে পারেনি । তাই ডক্টর রেহমান একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছিলো
যে
রোল নাম্বার পঁচিশ ডক্টর রেহমানের কাছ থেকে তার দেহ পসরার স্বীকৃতি চেয়েছিল । `সেটা যখন সেদিন আদায় করেই ছেড়েছে আর সে ডক্টর রেহমানকে জ্বালাতন করতে আসবে
না
। অতঃপর একটি স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে ডক্টর রেহমান কাগজ-কলম নিয়ে সিলেবাস লিখা আরম্ভ করলো । কিন্তু দু এক কলম লিখতেই ঝড়ের বেগে রোল নাম্বার পঁচিশ তার চেম্বারে ঢুকলো । ডক্টর রেহমান চোখ তুলে দেখলো । উত্তেজিতা রোল নাম্বার পঁচিশ আগুন চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে ।
আপনি নাকি বিবাহিত?
তোমার জানার প্রয়োজন কি?
প্রয়োজন- অপ্রয়োজন সেটা পরে । আগে আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটার জবাব দিন ।
আমি তোমার এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না ।
কিন্তু আমার জানা প্রয়োজন
।
তোমার প্রয়োজনে আমার কিছু আসে যায় না ।
এটা আপনার মনের কথা নয় ।
নিশ্চই মনের কথা ।
এতোই যখন মনের কথা বলছেন তাহলে আর একটি মনের কথা বলুন, সত্যিই আপনি বিবাহিত কিনা।
জানতেই যখন চাচ্ছ, শুনে রাখো, হ্যাঁ আমি বিবাহিত । এবার আসতে পারো এবং ভবিষ্যতে আর জ্বালাতন করতে এসো না
।
কেন বিয়ে করেছেন?
এটা কি একটা প্রশ্ন হলো? তুমি বিয়ে করেছ কেন?
করবো না তো কি করব? আপনার জন্য কি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করব?
তুমি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছ । কথা একটু আস্তে বল । আমার চেম্বারের বাইরে ছাত্র
ছাত্রীরা আছে । কথাগুলো বলেই ডক্টর রেহমান ধক ধক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলল
।
রোল নাম্বার পঁচিশ কথা বললো না । ফ্যাল
ফ্যাল করে ডক্টর রেহমানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এবং কিছুক্ষণ পর চেম্বার
থেকে বেরিয়ে গেলো ।
ডক্টর রেহমান
রোল নম্বর পঁচিশের গমন পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল । রোল নাম্বার পঁচিশের এহেন আচরণের কোন কারণ বের করতে পারল না । না পেরে সিলেবাস প্রণয়নে আবার যথাযথভাবে মনোনিবেশ করল ।
এগারো
আজ ডিপার্টমেন্টে এসে কাজ করতে বসতেই ডক্টর রেহমান স্বস্থির নিঃশাস
ফেললো । ডক্টর রেহমান ভেবে নিলো যে রোল নাম্বার পঁচিশ জব্দ হয়েছে
।
সুতরাং আর কখনো ডিস্টার্ব করতে আসবেনা । কিছুদিনের ঝঞ্ঝাটপূর্ণ ত্রিদেয়াল পেরিয়ে ডক্টর রেহমান সত্যি সত্যি আজ রিলাক্স ফিল করতে থাকলো
।
কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা ঠেলে চেম্বারে ঢুকে কোন অনুমতি
নেয়ার প্রয়োজন বোধ না করেই রোল নাম্বার পঁচিশ একটি চেয়ার দখল করে বসে পড়লো । ডক্টর রেহমান তখন আশ্চর্য না হয়ে পারল না । ডক্টর রেহমান তখন এতোই আশ্চর্য হলো যে, কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে রোল নম্বর পঁচিশের প্রতি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলো । রোল নাম্বার পঁচিশ টেবিলের উপর রাখা একটি প্যাকেট খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো । ডক্টর রেহমান নিরাসক্ত কন্ঠে বললো…
দেখো আমার হাতে কিন্তু প্রচুর কাজ ,না করলেই নয় ।
তা করবেন, আমি ধরে রেখেছি নাকি?
না মানে, থার্ড পারসন যে কেউ উপস্থিত থাকলে আমি কাজে এগুতে পারিনা
।
থার্ড পারসন? থার্ড পারসনটা আবার কে ? থার্ড পারসন..
না মানে, তোমার কথা বলছিলাম আর কি!
আমি, আমি থার্ড পারসন? সেকেন্ড পার্সনটা কে তাহলে ?
না.. বলি কি হাতের কাজটা অতি জরুরী, শেষ না করলেই নয় ।
তা করে ফেলুন না । আমি আপনাকে ধরে রেখেছি নাকি?
ডক্টর রেহমান এরপর আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না । অগত্যা কাগজ-কলম নিয়ে কিছু একটা আঁকিবুকি করতে থাকলো । রোল নাম্বার পঁচিশ কথা বলে..
এই যে, পিরিচ
তিরিচ হবে?
কি বললে? পিরিচ
তিরিচ দিয়ে করবোটা কি?
কি করবেন পরে দেখা যাবে । থাকলে আগে বের করুন
।
না নেই ।
না থাকলে আর কি করবো । বাক্স থেকে হাত দিয়ে নিয়েই খান ।
মিষ্টি? আরে! এটা কি তুমি রেস্টুরেন্ট পেয়েছ?
তা আমি বুঝি
না । আপনার বিয়ের পর আপনাকে আমার পক্ষ হতে মিষ্টি খাওয়ানো হয়নি । আপনার বিয়ের মিষ্টি খান । আর আপনার আলমারির চাবিটা দিন তো?
কেন চাবি দিয়ে কি করবে?
তা কি করব দেখতে পাবেন?
না চাবি পাবে না । আর এ সমস্ত ঝামেলা আমার একদম সহ্য হয় না । যত্তো সব বাড়তি ঝামেলা
!
রোল নাম্বার পঁচিশ নিজেই খুঁজতে থাকে । সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ড্রয়ারের সাথেই চাবিটি পেয়ে যায়।
চাবি হাতে নিয়েই আলমারি খুলে নিজের ব্যাগ খুলে কি সব জিনিসপত্র বের করতে থাকে । এক এক করে আলমারিতে সাজাতে থাকে । ডক্টর রেহমান বসে বসে দেখতে থাকে ।
রোল নাম্বার পঁচিশের ব্যাগটি যখন খালি হলো, আলমিরা বন্ধ করে রোল নাম্বার পঁচিশ চাবিটা ডক্টর রোমানের সামনে রাখে
।
আলমিরাতে কিছু শুকনো খাবার রাখলাম, ক্ষুধা পেলেই খাবেন
।
কথাগুলো বলেই রোল নাম্বার পঁচিশ চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো । ডক্টর রেহমান কোন কথা বলার অবকাশ পেলো না । সামনে রাখা মিষ্টির প্যাকেটের প্রতি তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের মনে রোল নাম্বার পঁচিশের
খামখেয়ালিপনার দৌড়াত্বের পরিমাপ করার চেষ্টা করে ।
বারো
ডক্টর রেহমান ভালো ভাবেই বুঝে উঠতে পেরেছিল যে, রোল নাম্বার পঁচিশ তাকে সর্বদা জ্বালাতন করেই যাবে । তবে ডক্টর রেহমান এই ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছিল না, কেন রোল নাম্বার পঁচিশ তার পেছনে এমন করে লেগেছে?
এটা ভাবতে ভাবতে ডক্টর রেহমান এর একটা সুরাহা খুঁজতে চেষ্টা করে।
এ
শুরাহাগুলোর মধ্যে দুটিকে যথাযথ
বলে
ডক্টর রেহমান অনুমান করে। এক, ডিপার্টমেন্টাল চেয়ারম্যান,
মানে রোল নাম্বার পঁচিশের পিতার কাছে নালিশ করা । দুই, রোল নাম্বার পঁচিশের হাজব্যান্ডকে ব্যাপারটা জানানো । এ দুটির মধ্যে ডক্টর রেহমান শেষটিকেই
শ্রেয় বলে মনে করলো । কেননা এতে যুক্তি আছে । ব্যাপারটি হাজব্যান্ডকে জানাতে
পারলে রোল নাম্বার পঁচিশের এ বেলেল্লেপনার একটা উচিত জবাব দেয়া যাবে । অতঃপর সুকৌশলে রোল নাম্বার পঁচিশের কাছ থেকে তার হাজবেন্ডের ঠিকানা চেয়ে নেবার প্লান করে ডক্টর রেহমান রোল নাম্বার পঁচিশের আগমনের অপেক্ষায় বসে রইল
।
রোল নাম্বার পঁচিশ এলো । ডক্টর রেহমান আশ্চর্য হয়ে দেখল, রোল নাম্বার পঁচিশের আঁটসাঁট জামাটি আর নেই ।
রোল
নাম্বার পঁচিশ তার পুরোনো শাড়িখানায়ই পড়ে এসেছে । মুখে একরাশ মলিনতা । এক নিসর্গের
মৌনতা । অগ্নি শর্মা জ্বলন্ত নরক কুন্ডলি রোল নাম্বার পঁচিশ আজ যেনো
শান্ত নির্জন এক সমুদ্র । পটলচেরা চোখে রোল নাম্বার পঁচিশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ডক্টর রেহমানের দিকে । ডক্টর রেহমান উদ্বিগ্ন চোখে তাকালো রোল নাম্বার পঁচিশের দিকে এবং ক্ষনিকেই বড় ব্যস্ত হয়ে পড়ল ডক্টর রেহমান
……
এই যে তুমি এসেছ
?
বসো ।
রোল নাম্বার পঁচিশ চুপচাপ বসে পড়লো । একটি কথা বলবার শক্তিও যেনো তার নেই ।
ডক্টর রেহমান কন্ঠে আপ্যায়নের সুর এনে জিজ্ঞেস করল..
চা খাবে ?
রোল নাম্বার পঁচিশ মাথা নাড়ল, খাবে না ।
ডক্টর রেহমান কন্ঠে আরো পেলোবতা মিশিয়ে মুখে একটু
হাসি আনার চেষ্টা করলো ….
আচ্ছা রেগুলার তো একা একা আসো আমার কাছে । তুমি
আসলে আমি কোন প্রকার ডিস্টার্ব ফিল করি না । তোমার যখন খুশি এসো । তবে মাঝে মাঝে তোমার হাজব্যান্ডকেওতো সাথে নিয়ে আসতে পারো
।
রোল নাম্বার পঁচিশ মাথা নাড়লো, না স্বামীকে সাথে নিয়ে আসতে
পারে না ।
ডক্টর রেহমান কন্ঠে আরও একটু স্বতঃস্ফূর্ততার ভাব আনার চেষ্টা করে….
জানি, তোমার হাজব্যান্ড একজন ব্যস্ত মানুষ, আমাদের মতো লেকচারারদের কাছে এসে এক দন্ড বসবেন সে সময় কোথায় । তা তার ঠিকানাটা আমাকে দিয়ে দাও না । আমি নচেৎ তার সাথে গিয়েই
একবার দেখা করে আসবো ।
রোল নাম্বার পঁচিশ একেবারে চুপ হয়ে থাকে
।
ডক্টর রেহমান তবুও নিরাশ হয় না । আবারও রোল নাম্বার পঁচিশ কে জিজ্ঞেস করে……
আচ্ছা, উনি থাকেন কোথায়?
অকষ্যাৎ রোল নাম্বার পঁচিশের ভিতর একটা পরিবর্তন আসে । নিজের শরীরটাকে একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ায়, চিৎকার দিয়ে ওঠে বলে …
স্বর্গে, কেন আপনার প্রয়োজন কি?
ও স্যরি, তুমি
ব্যাপারটাকে আদারওয়াইজ নিচ্ছো । আমি শুধু শুধু জানতে চেয়েছি আর কি । বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য কিন্তু আমার নেই ।
বললাম তো উনি স্বর্গে আছেন
।
যান না, আপনিও স্বর্গে চলে যান এবং উনার সাথে মোলাকাত করেন !
দেখো, তুমি সব ব্যাপারেই সিরিয়াস হয়ে যাও ।
ব্যাপারটা অতি সামান্য । তোমাদের স্বাভাবিক সম্পর্কে কোন প্রকার ব্যাঘাত হোক, এটা আমার কাম্য নয় । আমার নিজের স্বার্থে ওনার একটু সাহায্য প্রয়োজন । এ ব্যাপারে আমি তোমার সাহায্য চাচ্ছি
।
রোল নাম্বার পঁচিশ শান্ত হয়ে যায় । নির্জন চোখে মলিনতার
ঢেউ
তোলে । মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে…
আপনি কি সত্যি জানেন না যে আমার হাজব্যান্ড
বেঁচে নেই?
ছি, কি বলছো এসব…
রোল নাম্বার পঁচিশের সম্পূর্ণ সত্তায় একটু পরিবর্তন আসে । মুখে একটু করুন হাসি টেনে বলে চলে …….
ও ছিল মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার । দু'বছর আগে একটি খনিতে কাজ করার সময় মাটি চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয় ।
ডক্টর রেহমান থ হয়ে যায়
।
কি বলে রোল নাম্বার পঁচিশ কে সান্ত্বনা দেবে কিছুই ভেবে পায় না । শোকাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে সে রোল নম্বর পঁচিশের দিকে । এ ভাবেই দুজনের কতকগুলো মুহূর্ত কেটে যায় । রোল নাম্বার পঁচিশের মুখের মলিন হাসিটি লেগেই থাকে । এক সময়ে রোল নাম্বার পঁচিশ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে । চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে মুখে একরাশ হাসি টানে এবং চোখে এক সূর্য আলো জ্বেলে জিজ্ঞেস করে……….
আচ্ছা আপনি পেয়েছেন কি, বিয়ে করেছেন তো । বউকে নিয়ে থাকবেন তো । এই
যে
ম্যারেজ ব্যাচেলর হিসেবে থাকছেন, এ থাকার মধ্যে কোন মাধুর্য্য আছে? এভাবে থাকলে আপনার স্বাস্থ্যতো ভেঙ্গে যাবে । এক্ষুনি আপনার
কথা
দিতে হবে, বউ আনছেন কবে?
ডক্টর রেহমান একটু কেঁপে ওঠে । নিজের স্থবিরতাকে একটু ছাড়ানোর চেষ্টা করে । চোখে একমুঠো বিষণ্নতা ছড়িয়ে ঠোঁটে এক টুকরো বিষন্নতার হাসি মাখে । সে মলিন হাসিটি মুখে নিয়েই রোল নাম্বার পঁচিশের চোখে চোখ রাখে । রোল নাম্বার পঁচিশ চকিতে আবার জ্বলে ওঠে । চোখে শাসন এনে পুনরায় চেচিয়ে ওঠে….
দেখুন আমাকে আজ একটা ফাইনাল কথা বলতে
হবে
। আমাকে আপনার বলতে হবে, আপনি আপনার বউ আনছেন কবে । আপনার এ রকম ছন্নছাড়া জীবন যাপন আমি আর দেখতে চাই না । একটু শান্তি দিন আমাকে প্লিজ!
হঠাৎ
করেই রোল নাম্বার পঁচিশের রাগ নেমে আসে । একটুক্ষণ চুপ থেকে কাতর কণ্ঠে আবার বলে…..
আর একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে । আপনার কোন স্মৃতি আমার কাছে নেই । অন্তত আপনার এক কপি ছবি আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাই । আশা করি ফেরাবেন না । আমি জানি, আমি আপনার
চেম্বারে আসলে আপনি বিরক্ত হন । আর তাছাড়া, রেগে গেলে পারিপার্শ্বিকতার কথা আমার স্মরণে থাকে না । আপনার চেম্বারে আমার যাতায়াত আপনার পার্সোনালিটির হ্যাম্পার করতে পারে । যেটা
আমারও কাম্য নয় । তাই আজকে এসেছি আপনার কাছ থেকে আপনার এক কপি ছবি চেয়ে নেবার জন্য, যাতে আপনাকে আর বিরক্ত করতে না হয় । আমি জানি সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আপনার কাছে সনাতন বলে মনে হবে । আপনার পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণার কাছে আমার এ চাওয়া সনাতন হতেই পারে।
কিন্তু একজন বাঙালি মেয়ের কাছে ব্যাপারটা যে চিরায়ত, তা অস্বীকার করবেন কেমন করে?..
কথাগুলো বলেই রোল নাম্বার পঁচিশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । নিজের ভারী হয়ে আসা কন্ঠকে একটু হালকা করার চেষ্টা করে । করুন কণ্ঠে আবার মিনতি রাখে………
তবে আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, আপনার ছবির কোন অমর্যাদা আমি করবো না । সারা জীবন ধরে আগলে রাখবো । দেবেন? আপনার
এক কপি ছবি ?
ডক্টর রেহমান মুর্হ্যমান হয়ে পড়ে । সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে এবং রোল নম্বর পঁচিশের শান্ত দৃষ্টির ভেতর কি যেনো একটা খুঁজতে
থাকে ।
…সত্যি দেবেন?
রোল নাম্বার পঁচিশ খুশিতে টগবগে হয়ে ওঠে । তাহলে এবার বলুন, আপনার বউকে আনছেন কবে ।
ডক্টর রেহমান হাসে….
থাকলেই তো আনবো
!
দুষ্টুমির এখন সময় নয়, বলুন
কবে আনছেন আপনার বৌকে, আমি চলে যাচ্ছি ।
সত্যিই তো বললাম । আমার বিদেশ যাবার ছয় মাস পরে একটি মৃত বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে ও নিজেই মরে গেছে
।
চুপ করুন, মিথ্যে কথা!
ডক্টর রেহমান হাসে । তার দুচোখে করুন দৃষ্টি । নিস্তেজ
কণ্ঠে বলে চলে ……….
যা সত্যি, আমি শুধু তাই বলেছি । অবিশ্বাসের ভার সে তো তোমার উপর ।
মুহূর্তে রোল নাম্বার পঁচিশের সমস্ত শরীরে একবার কিসের যেনো ঝাঁকুনি লাগে । দু’হাত দিয়ে টেবিলের কিনারা ঝাপ্টে ধরে ধাক্কাটা সামলে নেয় রোল নাম্বার পঁচিশ । ডক্টর রেহমানের চোখে অনেকক্ষণ চোখ রেখে কি যেনো বলার চেষ্টা করে । অতঃপর কোন কিছু
না বলেই ধীর পায়ে দরজা পেরিয়ে প্রস্থান করে ।
ডক্টর রেহমান নিঃচুপ বসে থাকে । রোল নাম্বার পঁচিশের গমন পথের উপর দৃষ্টিকে
আবদ্ধ রেখে সাত বছর আগেকার দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকে … পটল চেরা চোখের একটি মেয়ে । চঞ্চলা হরিণীর মতো সারা শহর জুড়ে আনন্দ নৃত্যে দৌড়ে বেড়াচ্ছে । ডক্টর
রেহমানের খুবই ভালো লাগে সে দৃশ্যটি দেখতে।
রোল নম্বর পঁচিশের সচঞ্চল ছোটাছুটি ডক্টর রেহমানের মনের আঙিনায়ও দোল দোল দিয়ে
চলে । সে দোলায় দোল খেতে খেতে কি একটা অদৃশ্য আবেশে আবেশিত হয়ে পড়ছে ডক্টর রেহমান। আবেগে চোখ দুটো বুজে আসে ডক্টর রেহমানের । ডক্টর
রেহমানের মনে হয়, পটলচেরা চোখের চঞ্চলা হরিণী রোল নম্বর পঁচিশ ছুটছে তো ছুটছে। আর রোল নম্বর পঁচিশের পেছনে পেছনে ছুটছে ডক্টর রেহমানও
। ছুটছে তো ছুটছে। এ ছুটার যেনো
শেষ হবে না কোনো দিনও ।
ভার্সিটির
এ ছোট্ট চেম্বারে বসে ডক্টর রেহমান অনুভব করতে থাকে, তার পাষান হৃদয়ের কঠিন পৃষ্ঠে
অসংখ্য ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। সে ফাটল হতে চঞ্চলা
মেয়েটির জন্য মায়াময়ী সুধারস ঝরছে। জমে যাচ্ছে ডক্টর রেহমানের মনের কোণে। মনের কোন থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে মনের গহীনে। সযতনে−, সন্তর্পনে।
কোন মন্তব্য নেই
50